বাচ্চাদের টিকার তালিকা

 

প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা

 



রোগব্যাধি

বাংলাদেশ একটি ঘন বসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ। এখানে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে মা শিশু মৃত্যুর হার অধিক, তন্মধ্যে ছয়টি রোগ টীকা দান কর্মসূচির (ইপিআই) মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে এই টীকা দানের কারণে মা শিশুর অকাল মৃত্যু বহুলাংশে কমে এসেছে।

সকল রোগের কারণ, লক্ষণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিম্নে আলোচনা করা হল:

. ধনুষ্টংকার (TT)

কারণ : পশুর মলের মাধ্যমে নির্গত জীবানু মাটির সাথে মিশে থাকে এই রোগের জীবানু কাটা বা ক্ষত স্থান দিয়ে মানব দেহে প্রবেশ করে। বিশেষ করে শিশুর জন্মের পর অপরিস্কার (জীবানু মুক্ত নয়) ছুড়ি, কাচি, বা ব্লেড দিয়ে নাড়ি কাটলে অথবা কাঁচা নাড়িতে, গোবর, ময়লাযুক্ত কাপড় ব্যাবহার করলে নবজাতক শিশুর ধনুষ্টংকার হতে পারে

লক্ষণ : জন্মের - দিনের মধ্যে শিশুর হাত পা শরীর শক্ত হয়ে যায়, দুধ খায়না, কাঁদতেও পারে না। -১০ দিন পর শিশুর হাত পা শরীর অধিক শক্ত হয়ে যায় এবং শরীর পিছনের দিকে বাঁকা হয়ে খিচুনী হয় শিশু মারা যায়

প্রতিরোধ : *নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করা, নাড়ি কাটার জন্য জীবানু মুক্ত ব্লেড আধা ঘন্টা ফুটন্ত পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে ব্যবহার করা


* গর্ভবর্তী মাকে টিকা দিয়ে এই মৃত্যু রোধ করা যায়

* ১৫-৪৫ বছর বয়সী সকল মহিলাকে পাঁচ ডোজ টিটি টিকা নিম্নলিখিত সময়ের ব্যবধানে দিতে হবে;

-১ম ডোজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব

-২য় ডোজ ১ম ডোজের মাস পর

-৩য় ডোজ ২য় ডোজের মাস পর

-৪র্থ ডোজ ৩য় ডোজের বছর পর

 * সাধারণভাবে সকল পুরুষ/মহিলাকে টিটি টিকা নিতে হবে।

কোন মহিলা পূর্বে টিটি টিকা না নিলে গর্ভাবস্থায় ৪র্থ ৮ম মাসের মধ্যে ২টি এবং সন্তান প্রসবের পরে নুন্যতম সময় ঠিক রেখে আরও তিনটি টিকা দিতে হবে


. ডিপথেরিয়া

কারণ : ডিপথেরিয়া জীবানু রোগাক্রান্ত শিশুর হাঁচি, কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। জীবানু সুস্থ্য শিশুর শরীরে প্রবেশ করে আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে আসলেও রোগ ছড়ায়।

লক্ষণ: - দিনের শিশু খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঠিকমত খায়না, খেলাধূলা, ছোটাছুটি করে না, জ্বর কাশি হয়। গলা ফুলে যায়, গলদেশের ভিতরে সরের মত সাদা আস্তরণ পড়ে।

প্রতিরোধ : শিশুর জন্মের বছরের মধ্যে মাস পরপর ডোজ ডিপিটি টিকা দিলে শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যায় শিশুর জন্মের পর সপ্তাহ হলেই ১ম ডোজ টিকা আরম্ভ করতে হবে এবং নির্দিষ্ট ব্যবধানে সব কয়টি ডোজ সম্পন্ন হবে

. হুপিং কাশি

কারণ : হুপিং কাশিতে আক্রান্ত শিশুর হাঁচি কাশির মাধ্যমে আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়ায়।

লক্ষণ : ১ম সপ্তাহে শিশুর জ্বর হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, চোখ মুখ লাল হয়ে যায় কাশি দেখা দেয়। সপ্তাহে কাশি মারত্মক আকার ধারণ করে হুপ শব্দ করে শ্বাস নেয়, যদি কাশি তিন সপ্তাহের বেশী হয় তা হলে হুপিং কাশি হিসেবে ধরে নেয়া যায়।

প্রতিরোধ : শিশুর বছর বয়সের মধ্যে এক মাস অন্তর অন্তর ডোজ ডিপিটি টিকা দিলে শিশুকে হুপিং কাশি থেকে রক্ষা করা যায় ১ম ডোজ শিশুর সপ্তাহ বয়স থেকে শুরু করতে হবে।


৪. পোলিও :

কারণ : আক্রান্ত ব্যক্তির মল দ্বারা দুষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়াতে পারে।

লক্ষণ : ১-৩ দিনে শিশুর স্বর্দি কাশি ও জ্বর হয়। ৩-৫ দিন মাথা ব্যাথা, শিশুর হাত পায়ে ব্যাথা হওয়ার কারণে শিশু দাড়াতে চায়না । অবশেষে শিশুর একাধিক হাত, পা পঙ্গু হয়ে যায়।

প্রতিরোধ : শিশু জন্মের ৬ সপ্তাহ পর থেকে এক মাস পর পর তিন ডোজ পোলিও টিকা (ওপিভি) খাওয়ালে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। যদি কোন শিশু হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে তা হলে জন্মের পর পরই তাকে এক ডোজ টিকা খাওয়াতে হবে। যা অতিরিক্ত ডোজ বলে গণ্য হবে। পড়ে ৬ সপ্তাহ বয়স হলে তিন ডোজের কোর্স শুরু হবে।

৫. হাম :

কারণ : আক্রান্ত শিশুর হাচি কাশি থেকে হামের জীবানু বাতাসের মাধ্যমে সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে বা হমে আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে এলেও এ রোগ ছড়াতে পারে।

লক্ষণ : ১-৩ দিন বেশ জ্বর, সর্দি ও কাশি হয়ে চোখ লাল ও চোখে পানি ছলছল করে। ৩-৪ দিন কানের পিছনে এবং কপালে লালচে হয়ে দানা দেখা দেয়, পরে তা মুখে ও শরীরের সর্বত্র দেখা দেয এ সময় জ্বর কমে যায়। ৬ষ্ঠ দিন দানা কালচে হয়ে একসময় খুসকির মত ঝড়ে যায়। হামের ফলে শিশুর নিউমোনিয়, ডায়ারিয়া, পুষ্টিহীনতা, চোখ উঠা ও কান পাকাসহ জটিল রোগ দেখা দিতে পারে এবং মস্তিস্কের ক্ষতিও হতে পারে।


প্রতিরোধ : শিশুর বয়স নয় মাস পূর্ণ হলে ১ ডোজ হামের টীকা দিয়ে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায় । পুষ্টিহীন শিশুরা হামের ফলে পরবর্তী বিভিন্ন ধরণের রোগের সম্মুক্ষিণ হয়।৪-৬ মাসের শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালে রোগ পরবর্তী জটিলতা থেকে রক্ষা করা যায়।




৬. যক্ষ্মা

কারণ : আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে, হাঁচি, কাশি ও থুথু'র মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।

লক্ষণ : প্রথম অবস্থায় অল্প অল্প জ্বর ও কাশি হয়, ক্ষুধা কমে যায়, ওজন কমতে থাকে, ফুসফুস ছাড়াও ঘাড়ের গ্রন্থি (Gland) সহ যে কোন অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। গ্রন্থি-বগল বা ঘারের গ্রন্থি ফুলে পেকে ক্ষতের সৃষ্টি করে। হাড়- যে কোন হাড়ের জোড়া ফুলে যায়। মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে যায়, ব্যাথা হয়। মস্তিস্ক - (টিবি মেনিনজাইটিস) এর ফলে মারাত্মক মাথা ব্যাথা, অচেতনতা, ঘাড় শক্ত হওয়া ও খিচুনি হতে পারে ।


প্রতিরোধ : জন্মের পরপরই যদি তাড়াতাড়ি সম্ভব এক ডোজ বিসিজি টিকা দিয়ে শিশুর দেহে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা যায়;



Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

SVG Icons